আমি আমজাদের মা
–সুব্রত আচার্য্য
আমি আমজাদের মা গো … পদ্মা পাড়ে, মোল্লা পাড়ায় থাকি।
পদ্মার দুকুল ঝাপিয়ে যখন বন্যা এলো, আমজাদের তখন জন্ম হল। সবাই বলত বাপের মতো হয়েছে। কেউ কেউ বলত মাথা ভর্তি চুল হয়েছে। আমার মতো নাকি ছোট্ট কপাল। যেই বন্যার জল শুকিয়ে গেল, আমজাদের বাপ কোথায় হারিয়ে গেল। সবাই বলে ওর বাপ নাকি কাঁটাতারের ওপারে নতুন ঘর বেঁধেছে।
আমজাদ তখন ছোট, দশ কি বারো হবে, এক ফকির বাবা কে দেখে সে কি কান্না। স্মৃতির অদূরে ভেসে চলে আমার ভাগ্য লেখা। ভাগ্য আমায় বেঁধেছে কাঁটাতারে, পদ্মায় ভেসেছে জীবন।
আজ কতদিন হয়ে গেল, কতদিন দেখিনা ওকে। মায়ের মন পদ্মার জল আর কাঁটাতারে। আগে তবুও ছ’মাস ছাড়া আসত, বলত কাজের খুব চাপ, তুই চিন্তা করিস না মা আব্বাকে ঠিক ফিরিয়ে নিয়ে আসব। চোখ থেকে চোখে এক বোবা কান্নার ছবি ফুটে ওঠে।
তোমরা কেউ কি বলতে পারো, আমজাদ কে কোথায় পাবো? কেউ কিছু বলছো না কেন? এই সিরাজ তুই তো ওর ছোট বেলার বন্ধু। তুই কি জানিস আমজাদ বাড়ি ফিরবে কবে? আজ বাড়িতে সব বাড়ন্ত।
আজ সূর্য উঠুক পবিত্র নামাজে সুরে। নামাজের ধ্বনিতে ছিঁড়ে যাক কাঁটাতারের বাঁধন। আমি কাঁটাতারের ওপারে কি আছে কোনদিন দেখিনি। শুধু পদ্মায় ভাসিয়েছি এ জীবন। তাই আমি যাব কাঁটাতারের দেশে। আজ যে সব বাড়ন্ত। চিৎকার করে বলব, শুনতে পাচ্ছো… আমি আমজাদের মা বলছি … পদ্মা পাড়ে, মোল্লা পাড়ায় থাকি।